
কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলায় গত কয়েকদিন ধরে ভ্যাপসা গরমে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হয়েছে। আশেপাশের উপজেলায় বৃষ্টি হলেও চিলমারীতে কাঙ্খিত বৃষ্টি না হওয়ায় গরমের ফলে রোগের সংক্রামণ বেড়ে গেছে। গত সাত দিনে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন ৪০০ জন রোগী, যার মধ্যে নারী, পুরুষ ও শিশু অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
হাসপাতালটিতে বর্তমানে কলেরা স্যালাইন সংকট দেখা দিয়েছে। চিকিৎসকরা সাধারণ জনগণ ও রোগীদের সতর্কতা অবলম্বন করার পরামর্শ দিয়েছেন। আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হচ্ছে, আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে জেলায় বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।
চিলমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা যায়, ভ্যাপসা গরমজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে অনেকেই চিকিৎসা নিচ্ছেন। তবে ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ভর্তি রোগী ও তাদের স্বজনদের অভিযোগ, হাসপাতাল থেকে স্যালাইন সরবরাহ করা হচ্ছে না। ফলে তাদের বাইরের ফার্মেসি থেকে স্যালাইন কিনতে হচ্ছে, যা হতদরিদ্র পরিবারের জন্য অতিরিক্ত অর্থের বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ভর্তি রোগী আব্দুর রহমানের স্বজন রেহেনা জানান, পাতলা পায়খানা ও জ্বরের কারণে তাকে ভর্তি করা হয়েছে। কিন্তু গত মঙ্গলবার থেকে ভর্তি থাকা সত্ত্বেও হাসপাতাল থেকে কোন প্রকার স্যালাইন সরবরাহ করা হয়নি। তাদেরকে বাইরে থেকে কিনে দিতে হচ্ছে।
সাধারণ ওয়ার্ডের রোগী আব্দুল মজিদ কাশিম বাজার থেকে এসেছেন। তিনি রোববার থেকে ভর্তি আছেন। থানাহাট ইউনিয়নের ঠগের হাট এলাকার স্মৃতি বেগম হঠাৎ মাথাব্যথা ও শরীর দুর্বলতার কারণে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, গত ১০ জুন হাসপাতালে ৭১ জন রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন, ১১ ও ১২ জুন ৬২ জন, এবং ১৩ জুন কিছুটা কম হলেও ৬০ জন রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। এরপর ধারাবাহিকভাবে ১৪, ১৫, ১৬, ১৭ ও ১৮ জুন ৭০ থেকে ৮০ জন রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। এই কয়েকদিনে কলেরা স্যালাইন সরবরাহ হয়েছে মাত্র ৬০টি, যা রোগীর তুলনায় অত্যন্ত সীমিত।
চিলমারী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্টোরকিপার (ভারপ্রাপ্ত) মোঃ নাসির উদ্দিন জানান, পাঁচ দিনে ৬০টি কলেরা স্যালাইন শেষ হয়ে গেছে। ডিএ, হার্টম্যান ও কলেরা স্যালাইন এবং ট্যাবলেট হিসটেসিনের চাহিদা পাঠানো হয়েছে। তিনি আশা প্রকাশ করেছেন যে, আগামী কয়েকদিনের মধ্যে এসেনসিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেড বগুড়া থেকে স্যালাইন সরবরাহ করবে।
চিলমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. আবু রায়হান বলেন, তীব্র গরমের কারণে সংক্রামণ থেকে রক্ষা পেতে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। তিনি জানান, গরমের পাশাপাশি ঈদে গরুর মাংস খাওয়ার পর পেটব্যথা রোগীর সংখ্যা বেড়ে গেছে। এসময় রোগীদের বেশি বেশি করে ওরস্যালাইন, আখের রস ও ডাবের পানি খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। স্যালাইন সরবরাহের অভাব সম্পর্কে তিনি বলেন, প্রতিটি উপজেলায় স্যালাইন সংকট রয়েছে এবং আগামী শনিবার থেকে স্যালাইন সরবরাহ শুরু হবে।