ময়মনসিংহের নান্দাইল এলাকায় প্রাক-প্রাথমিক ও প্রাথমিক স্তরের বিপুল পরিমাণ নতুন বই কেজি হিসেবে বিক্রি করা হচ্ছে। ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের বইগুলো গুদামে সংরক্ষিত ছিল। জানা গেছে, প্রতিটি বই উৎপাদনে সরকারের খরচ ৫০ টাকার বেশি হলেও, বর্তমানে সেগুলো মাত্র ১৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা হচ্ছে।
মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) পুরনো বই বিক্রির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন নান্দাইল উপজেলা শিক্ষা অফিসার ফজিলাতুন্নেছা। অভিযোগ রয়েছে যে, এই শিক্ষাবর্ষের শুরুর দিকে সরকারি বিদ্যালয়, নিবন্ধনকৃত বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কিন্ডারগার্টেনে অনেক শিক্ষার্থী বই অর্জন করতে পারেনি।
এর ফলে, নতুন বইগুলি গুদামে পড়ে থাকার কারণে সামাজিক সমাজের মধ্যে হতাশা সৃষ্টি হয়েছে। তারা বলছেন, সরকারের অর্থ ব্যয়ের অপচয় হচ্ছে।
সোমবার দুপুরে নান্দাইল উপজেলা পরিষদের পুরনো হলরুমে একটি কার্গো ট্রাক বই ভর্তি করতে দেখা যায়। কয়েকজন শ্রমিক হলরুমের ভেতর থেকে বই ট্রাকে তুলছিলেন। পাশেই বইয়ের হিসাব নিচ্ছিলেন উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার (এটিইও) হাফিজুর রহমান। কিন্তু বইগুলো কোনও স্কেলে ওজন না করেই তোলা হচ্ছিল।
তদন্ত করে জানা যায়, প্রতি বান্ডিল বইয়ের ওজন পূর্বেই ১২ কেজি নির্ধারণ করা হয়েছে। সোমবারেই মোট ৯ হাজার ৭২ কেজি বই বিক্রি হয়েছে। এখনও হলরুমে আরও বই অবশিষ্ট রয়েছে, যা সরকারি প্রতিষ্ঠান কর্ণফুলী পেপার মিলে বিক্রি হচ্ছ। ঢাকা ও ময়মনসিংহ অঞ্চলের বিভিন্ন উপজেলা থেকে এসব বই সংগ্রহ করে কর্ণফুলী পেপার মিলে পৌঁছে দিচ্ছেন ঢাকার ছোট কাটারার পরিবহন ঠিকাদার সেলিম শেখ।
উপজেলা এলাকার একটি পৌরসভা ও ১৩টি ইউনিয়নে মোট ১৭৮টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এছাড়া নিবন্ধনকৃত শতাধিক কিন্ডারগার্টেনেও পড়াশোনা করে বহু শিক্ষার্থী। প্রাথমিকের একটি বই তৈরিতে খরচ হয় ৫০ থেকে ৫২ টাকা, তবে বর্তমানে পাঁচ-ছয়টি বই একত্রে ১৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা হচ্ছে।
আদর্শ শিশু বিদ্যানিকেতন কিন্ডারগার্টেনের পরিচালক হাসান মাহমুদ তারিক জানান, প্রতিবছরই বইয়ের জন্য শিক্ষা অফিসে ঘুরতে হয়, কিন্তু হাতে কিছুই আসে না। এ বছর চতুর্থ শ্রেণির ১০ সেট বইয়ের জন্য অনেকবার গিয়েছি, কিন্তু একটি বইও পাইনি। এখন দেখি নতুন বই কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে—এটি সত্যিই নিন্দনীয়।
এ বিষয়ে নান্দাইল উপজেলা শিক্ষা অফিসার ফজিলাতুন্নেছা জানান, শিক্ষা অধিদপ্তরের নির্দেশনার অনুযায়ী টেন্ডারের মাধ্যমে ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের উদ্বৃত্ত বই কর্ণফুলী পেপার মিলে বিক্রি করা হচ্ছে। ২০২৫ সালের শিক্ষাবর্ষের বইগুলো বিক্রি করা হচ্ছে না।