
নেত্রকোনা শহরের মোক্তারপাড়া পুরাতন কালেক্টরেট এলাকার পরিচিত মুখ জসিম মিয়া (৫২) দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে তালশাঁস (নরম আটি) বিক্রি করে আসছেন। তিনি সদরের বড়াওয়ারি গ্রামে বসবাস করেন এবং গ্রামে গ্রামে ঘুরে গাছে উঠে নিজেই তাল পেরে নিয়ে আসেন। এরপর বিভিন্ন জনবহুল এলাকায় বসে কেটে কেটে বিক্রি করেন।
সম্প্রতি, সরেজমিনে কালেক্টরেট মাঠে গিয়ে দেখা যায়, জসিম মিয়া দ্রুত গতিতে তালশাঁস কেটে বিক্রি করছেন। অপরিপক্ক তালের এই বীজ খেতে অত্যন্ত সুস্বাদু, ফলে ক্রেতাদের মধ্যে আগ্রহ লক্ষ্যণীয়। প্রতি আঁটির মূল্য মাত্র ১০ টাকা, এবং এক তালে তিনটি শাঁস থাকে।
জসিম মিয়া জানান, তার পরিবারে পাঁচজন সদস্য রয়েছে। তিন মেয়ের মধ্যে দুই মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। তিনি প্রতি বার ২০০ থেকে ৩০০ তাল এনে নিজেই কেটে সাঁশ বিক্রি করেন, যার মাধ্যমে তার আয় হয় প্রায় এক হাজার থেকে দেড় হাজার টাকা। বর্ষা মৌসুমে তিনি এই ব্যবসা করেন এবং সারা বছর গাছ কাটা, ডাল ছাটানোসহ মানুষের আম, কাঁঠাল, জাম নামিয়ে দেন। মূলত, তিনি একজন গাছি এবং এই কাজের মাধ্যমেই তিনি সংসার চালান।
জসিম মিয়া আরও জানান, তিনি শহরের বিভিন্ন প্রান্তে তালের সাঁশ বিক্রি করে আসছেন। যদিও এটি একটি কষ্টসাধ্য কাজ, তবুও তিনি আনন্দের সঙ্গে এটি করেন। অল্প আয়ে তার মাঝে এক ধরনের তৃপ্তি অনুভব করেন। বর্ষার বৃষ্টিতে ভিজে তিনি কাজ করেন, যা তার জীবনের একটি অংশ হয়ে উঠেছে।
তালশাঁসের ক্রেতা শিক্ষক সৈয়দ শাকিল মোস্তফা জানান, তিনি তালের সাঁশ কিনতে এসেছেন এবং বাসায় নিয়ে সবাই মিলে খাবেন। তিনি বলেন, ‘এটি খেতে খুব স্বাদ। বেশি মিষ্টি না, কিছুটা পানসে হলেও একেবারে প্রথম পর্যায়ে ডাবের ভেতরে নরম ক্ষিরের মতো থাকে। এটাই খুব ভালো লাগে।
তিনি মনে করেন, জসিমদের মতো যারা অল্পতেই সংসার চালায়, তাদেরকে পৃষ্ঠপোষকতা করা প্রয়োজন। কারণ, গাছে ওঠা বর্ষায় রিস্ক জেনেও তারা এই কাজ করেন।
শিক্ষক সৈয়দ শাকিল মোস্তফা বলেন, ‘তবে খেটে খাচ্ছেন। এই জন্যে জসিমদের মতো মানুষদের তিনি স্যালুট দেন। কোনো নিদৃষ্ট স্থান বা কিছু নেই। এরা কারো কাছে গিয়ে কিছু চাইতেও পারেন না। তাই তিনি মনে করেন, তাদের পেশা অনুযায়ী কাজে পৃষ্ঠপোষকতা করা দরকার।