জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বাকি মাত্র সাড়ে তিন মাস (সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধ ধরে)। পিআর (আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব) পদ্ধতি না হলে নির্বাচনে অংশ নেবে না, বক্তব্যে লোকদেখানো এসব কথা বললেও জামায়াতে ইসলামী ইতোমধ্যে ৩০০ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করে পুরোদমে তাদের প্রার্থীরা নিজ নিজ এলাকায় প্রচারণা চালাচ্ছেন।
অন্যদিকে, দেশের সর্ববৃহৎ ও জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল বিএনপি এখনো প্রার্থী চূড়ান্ত করতে পারেনি; বরং প্রতিটি নির্বাচনী আসনেই প্রচার-প্রচারণা ও কাজ করে যাচ্ছেন দলটির একাধিক মনোনয়ন-প্রত্যাশী। বিএনপি এসব প্রার্থীর মধ্য থেকে বিগত দিনে আন্দোলন-সংগ্রামে ত্যাগী, নেতাকর্মী ও জনগণের কাছে জনপ্রিয় প্রার্থীদের তালিকা করছে। জয়ের সম্ভাবনা রয়েছেন এমন প্রার্থীদেরই এবার মনোনয়ন দিতে চায় দলটি।
এ জন্য বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের একাধিক টিম (জাতীয়তাবাদী মতাদর্শের ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও সংস্থা) মনোনয়ন-প্রত্যাশীদের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করে তার কাছে পাঠিয়েছেন। যেসব আসনে যাচাই-বাছাই সম্পন্ন হয়েছে সেখানে মনোনীত প্রার্থীকে তিনি নিজে ফোন করে জানিয়ে দিচ্ছেন এবং অন্যান্য মনোনয়ন প্রত্যাশীকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে নির্দেশনা দিচ্ছেন। দেশের প্রথম সারির গণমাধ্যমগুলোর প্রতিবেদনে এমন সব তথ্য উঠে আসে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, দলটির একাধিক সূত্র জানিয়েছে, চলতি মাসেই শেষে বা নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহের মধ্যেই ৩০০ আসনের প্রার্থী ঘোষণা করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তার আগে মনোনয়ন-প্রত্যাশীদের (জেলা বা বিভাগভিত্তিক) সঙ্গে পৃথকভাবে বৈঠক করে একক প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার নির্দেশনা তিনি ও স্থায়ী কমিটির দায়িত্বপ্রাপ্ত সদস্যরা দিচ্ছেন এবং দেবেন। একই সঙ্গে দলের মনোনীত প্রার্থীর বাইরে কাজ করা কিংবা বিরোধিতার চিন্তা করলে কঠোর শাস্তি, ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করলে পরবর্তীতে অন্যভাবে সম্পৃক্ত করার বার্তাও দেয়া হচ্ছে প্রার্থীদের।
প্রতিবেদন সূত্রে আরও উঠে আসে, বিএনপি সূত্রে জানা যায়, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ পালিয়ে গেলে ক্ষমতায় যাওয়া অনেকটা সময়ের ব্যাপার মনে করেছিলেন বেশির ভাগ নেতাকর্মী। তবে ধীরে ধীরে তাদের সেই স্বপ্ন ভাঙতে শুরু করেছে। কিছু কিছু এলাকায় দখল, চাঁদাবাজিসহ বেশ কিছু অপকর্ম, সংঘবদ্ধ অপপ্রচার ভাবিয়ে তুলেছে বিএনপিকে।
অবস্থা এমন হয়েছে, দলের একাধিকবার নির্বাচিত এমপি প্রার্থীও এবার পরাজিত হতে পারেন বলে দলের চেয়ারম্যানের কাছে বার্তা পৌঁছেছে। যদিও তিনি ৫ আগস্টের পর থেকেই নেতাকর্মীদের সতর্ক করে আসছেন, জানিয়েছেন নির্বাচন সহজ হবে না।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে কঠিন হবে বলে মন্তব্য করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেছেন, স্বৈরাচার পালিয়ে যাওয়ার কয়েক দিন পর আপনাদেরকে বলেছিলাম, আমাদের মধ্যে হয়তো অনেকেই ভাবছেন, একটি প্রতিপক্ষ তো আর মাঠে নেই, আগামী নির্বাচন কী আর এমন কঠিন হবে।
আমি বলেছিলাম, আগামী নির্বাচন বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে কঠিন হবে। এক বছর আগে আমি বলেছিলাম, অদৃশ্য শক্তি বিভিন্নভাবে কাজ করছে, বিভিন্ন ষড়যন্ত্র হচ্ছে। আজকে কি আমার কথার অর্থ বুঝতে পারছেন আপনারা? আমার কথার অর্থ অনুধাবন করতে পারছেন? কিন্তু যতই ষড়যন্ত্র করা হোক না কেন, আগামী দিনে আমরা ইনশাআল্লাহ সফল হবো। যদি বিএনপি নামক পরিবারটির সব সদস্য ঐক্যবদ্ধ থাকে।
ওই প্রতিবেদন থেকে আরও জানা যায়, নির্বাচনে এই কঠিন অবস্থা বুঝতে পেরে তাই ত্যাগী, যোগ্য, জনপ্রিয় প্রার্থীকে মনোনয়ন দিতে যাচ্ছে বিএনপি। নানা প্রক্রিয়ায় অনুসন্ধানে উঠে এসেছে সারা দেশের ৩০০ আসনের প্রতিটিতে পাঁচ থেকে ১০ জন করে নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার মতো যোগ্য নেতা রয়েছেন।