
২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য জাতীয় বাজেট প্রস্তাবে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের পরিবার এবং আহতদের জন্য ৪০৫ কোটি ২০ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ সোমবার (২ জুন) এই তথ্য উপস্থাপন করেন।
তিনি উল্লেখ করেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ইতিহাস ও স্মৃতি সংরক্ষণ, শহীদদের পরিবার এবং আহত ছাত্র-জনতার পুনর্বাসনের লক্ষ্যে ইতোমধ্যে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান অধিদফতর’ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। পাশাপাশি, গণভবনকে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান স্মৃতি জাদুঘর’ হিসেবে প্রতিষ্ঠার কার্যক্রমও চলছে।
ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ আরও জানান, শিগগিরই শহীদদের পরিবার এবং আহতদের জন্য ভাতা প্রদানের উদ্দেশ্যে একটি নীতিমালা প্রণয়ন করা হবে। তাদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের জন্য প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণের কথাও তিনি উল্লেখ করেন। ২০২৫-২৬ অর্থবছরে এই বরাদ্দের প্রস্তাবের মাধ্যমে সরকার শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করছে।
এবারের বাজেট দেশের অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা এবং স্থিতিশীলতা ও প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দ্বারা প্রণীত হয়েছে। অর্থ উপদেষ্টা ৭ লাখ ৮৯ হাজার ৯৯৯ কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব করেছেন, যা দেশের ৫৪তম বাজেট এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রথম বাজেট। এটি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মূল বাজেটের তুলনায় ৭ হাজার কোটি টাকা কম। বাংলাদেশের ইতিহাসে এটি প্রথমবারের মতো বাজেটের আকার হ্রাস পাওয়ার ঘটনা।
২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ লাখ ৬৪ হাজার কোটি টাকা। প্রস্তাবিত বাজেটের ঘাটতি ২ লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকা, যা দেশের জিডিপির ৩.৬২%। এই ঘাটতি পূরণের জন্য সরকার বৈদেশিক ঋণ, ব্যাংক ঋণ এবং সঞ্চয়পত্রের ওপর নির্ভর করবে। এবারের বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, রাজস্ব আহরণ বৃদ্ধি এবং সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে।
এছাড়া, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতা বৃদ্ধি, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, বিশেষ করে গ্রামীণ এলাকায় এবং অবকাঠামো উন্নয়নে জোর দেয়া হয়েছে। বিগত বছরগুলোতে বাজেট সাধারণত জুনের প্রথম সপ্তাহে উপস্থাপন করা হতো। তবে এবারে পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে বাজেট উপস্থাপন করা হয়েছে।
বাজেট-পরবর্তী সংবাদ সম্মেলন আগামীকাল মঙ্গলবার (৩ জুন) বিকেল ৩টায় অনুষ্ঠিত হবে। এই সংবাদ সম্মেলনে গণমাধ্যমকর্মীরা প্রশ্ন করার সুযোগ পাবেন। উল্লেখ্য, সংসদ না থাকায় এবারের বাজেটের ওপর কোনো সংসদীয় আলোচনা বা বিতর্ক হবে না। তবে, ঘোষণার পর প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর জনমত গ্রহণ করা হবে। অর্থ মন্ত্রণালয় দেশের নাগরিকদের কাছ থেকে মতামত চাইবে এবং সেই মতামতের ভিত্তিতে বাজেটের চূড়ান্ত রূপ দেয়া হবে। চূড়ান্তকরণের পর প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে বাজেট অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে।
বৈঠকে অনুমোদন পাওয়ার পর রাষ্ট্রপতি অধ্যাদেশ জারি করে বাজেটটি কার্যকর করবেন, যা আগামী ১ জুলাই থেকে কার্যকর হবে।