
ফিলিস্তিনের মুক্তিকামী মানুষের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে সোমবার সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দেশটির পতাকা ওড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে ছাত্রলীগ।রোববার বিকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন সংগঠনটির সভাপতি সাদ্দাম হোসেন।
ন্যায্যতা ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে স্বাধীন রাষ্ট্র ফিলিস্তিনের স্বীকৃতি এবং নিরীহ ফিলিস্তিনিদের ওপর পরিচালিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী শিক্ষার্থী সমাজ, শিক্ষক ও নাগরিকেরা যে আন্দোলনের সূচনা করেছে তার প্রতি সংহতি প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ।
প্রতিবাদের অংশ হিসেবে সোমবার (৬ মে) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) মধুর ক্যান্টিন থেকে রাজু ভাস্কর্যে ছাত্রলীগ কর্তৃক পতাকা উত্তোলন, পদযাত্রা ও ছাত্র সমাবেশসহ বিভিন্ন আঙ্গিকে কর্মসূচি ঘোষণা করেছে।ছাত্রলীগের নেতৃত্বে দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে একযোগে এই কর্মসূচি পালিত হবে।
ছাত্রলীগ সভাপতি জানান, পতাকা ওড়ানোর পাশাপাশি ওই দিন সংহতি সমাবেশ ও পদযাত্রাও করা হবে।কর্মসূচিতে বাংলাদেশে পড়তে আসা ফিলিস্থিনি শিক্ষার্থীরা উপস্থিত থাকবেন বলেও জানান তিনি।সময় দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের আহ্বান জানানো হয়।
এসময় ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থীদের শিক্ষাবৃত্তি ও কোটাসহ আবাসিক সুবিধা বাড়ানোর দাবি জানান ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম। তিনি বলেন, ‘ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থীদের জন্য যেন স্কলারশিপ চালু করা হয়।আমাদের সরকার ফিলিস্তিন ইস্যুতে যে ভূমিকা রেখেছে সংবেদনশীল দৃষ্টিতে দেখে, তাদের শিক্ষা জীবন যেন নির্বিঘ্ন রাখা হয়, সে ব্যাপারেও যেন জোরালো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়, সে আহ্বান আমরা রাখছি।’
সাদ্দাম বলেন, ‘যুদ্ধে বিনিয়োগ না করে শিক্ষায় বিনিয়োগ করার আহ্বান জানাই। অস্ত্র তৈরি না করে নতুন নতুন স্কুল নির্মানের আহ্বান জানাই।’এ সময় স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবিতে বিশ্বব্যাপী চলমান ছাত্র আন্দোলনে আটক শিক্ষার্থী-শিক্ষকদের মুক্তির দাবিও জানায় ছাত্রলীগ।

ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালি আসিফ ইনান বলেন, আজ সারা বিশ্বে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে আগ্রাসনের ‘স্টপ জেনোসাইড ইন ফিলিস্তিন’র আন্দোলন চলছে। ইসরায়েল কর্তৃক নিপীড়ন চলছে তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন আজ মাঠে নেমেছে। এ যাত্রায় ছাত্রলীগ থেমে নেই। তারই একটা ডেমো আগামীকাল ছাত্রলীগে প্রদর্শন করবে। আমরা দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ফিলিস্তিনের নিপীড়ন নির্যাতনের প্রতিবাদ প্রকাশ করে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কর্মসূচিতে স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের জন্য উদারভাবে আহ্বান জানায়
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, পৃথিবী আজ দুই ভাগে বিভক্ত। এক ভাগে শোষক শ্রেণি, আরেক ভাগে শোষিত। আমি শোষিতের দলে। চলার পথে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের এই দৃঢ় ঘোষণাকে সদা ধারণ করে আমরা বিশ্বব্যাপী চলমান এই ন্যায্যতার আন্দোলনের প্রতি সংহতি প্রকাশ করি।
আরও বলা হয়, নিরীহ-নিরাপরাধ ফিলিস্তিন নাগরিকদের সাথে পরিচালিত জঘন্য হত্যাকাণ্ড ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা যে আন্দোলন পরিচালনা করছে, আন্দোলন-প্রতিবাদ করতে গিয়ে বাঁধা-নির্যাতনের সম্মুখীন হচ্ছে তা গভীরভাবে অনুধাবন করে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। আজ থেকে ৫৩ বছর আগে বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের সময় এবং তৎপরবর্তীতে স্বাধীন বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখার স্বার্থে নানা সময় আন্দোলন করতে গিয়ে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ এবং এর নেতাকর্মীরা একই রকম প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হয়েছিলো। কেবলমাত্র স্বাধীনতা সংগ্রামেই ছাত্রলীগের সাড়ে ১৭ হাজার নেতাকর্মীকে নিজেদের প্রাণ বিসর্জন করতে হয়েছিলো।
বাংলাদেশ ফিলিস্তিনিদের জন্য স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য বিশ্ব দরবারে সদা-সর্বদা ক্রিয়াশীল একটি রাষ্ট্র উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পররাষ্ট্র নীতির অন্যতম দিক ছিলো ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা অর্জন। একইভাবে তাঁর কন্যা বাংলাদেশের অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রার অবিকল্প সারথি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা বিশ্ব মানচিত্রে যে বলিষ্ঠতার সাথে ফিলিস্তিনিদের অধিকার আদায়ের দাবী উত্থাপন করেছেন, তা অতুলনীয়-অভাবনীয়। তাঁদের পদাঙ্কন অনুসরণ করে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ১৯৪ নং রেজুলেশন এবং নিরাপত্তা পরিষদের ২৪২ ও ৩৩৮ নং রেজুলেশনে বর্ণিত দ্বি-রাষ্ট্র সামাধানের মাধ্যমে ফিলিস্তিন ভূখণ্ডে শান্তির প্রতি আমাদের অকুণ্ঠ সমর্থন।