সম্প্রতি আশুলিয়া, মিরপুর, চট্টগ্রাম ইপিজেড এবং ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালসে অগ্নিকান্ডের ঘটনায় শিল্প ক্ষেত্রের মধ্যে গভীর উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে। এই ধারা অত্যন্ত উদ্বেগজনক এবং ব্যবসায়ীদের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতার অনুভূতি বৃদ্ধি পেয়েছে।
কার্গো ভিলেজের মতো স্থানে অগ্নিকান্ডের ফলে রপ্তানি শিল্প ব্যাপক আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। অগ্নিকান্ডের জন্য আগামী কয়েকদিনে আমদানি-রপ্তানি কর্মকাণ্ড বিঘ্নিত হবে, যা বাজারে অবস্থান হারানোর আশঙ্কা সৃষ্টি করছে। Consequently, ক্রেতাদের আস্থা হ্রাস পাবে এবং আন্তর্জাতিক চুক্তিগুলোর ক্ষতি হবে। এর ফলে ব্যবসা-বাণিজ্যে দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির ভয় প্রকাশ করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।
গতকাল এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ইএবি) আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ব্যবসায়ীরা এসব উদ্বেগ প্রকাশ করেন। এই সময় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ইএবি) সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম, বাংলাদেশ এমপ্লয়ার্স ফেডারেশনের (বিইএফ) সভাপতি ফজলে শামীম এহসান, বাংলাদেশ ওষুধশিল্প সমিতির মহাসচিব মো. জাকির হোসেন, বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল, বাংলাদেশ জুয়েলারি উৎপাদন ও রপ্তানিকারক সমিতির সভাপতি আনোয়ার হোসেন, এবং বাংলাদেশ গার্মেন্ট অ্যাক্সেসরিজ অ্যান্ড প্যাকেজিং ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএপিএমইএ) সভাপতি মো. শাহরিয়ার।
ইএবি সভাপতি ও বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, “কার্গো ভিলেজে বহু বছর ধরে পণ্য খোলা আকাশের নিচে রাখা হয়। সেখানে নিরাপত্তার অভাব রয়েছে এবং চুরির ঘটনাও ঘটে। এটি শুধুমাত্র ব্যবসায়িক ক্ষতির কারণ নয়, বরং আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের কাছে বাংলাদেশে নেতিবাচক ভাবমূর্তি তৈরি করছে। এই অগ্নিকান্ডের জন্য বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (সিএএবি), কাস্টমস হাউস এবং বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস কর্তৃপক্ষের দায় রয়েছে।”
বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল বলেন, “এই ক্ষতি বিমানবন্দর পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে। এর পর বাড়িঘরে আক্রমণের সময় আসবে। বাংলাদেশে কে ষড়যন্ত্র করছে- এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এটি একটি ভূরাজনৈতিক সমস্যার ফল। এখানে অনেকের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে এবং রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রও রয়েছে। বহি:বিশ্বে আমাদের অবস্থান নষ্ট করার চেষ্টা হচ্ছে।”
বাংলাদেশ ওষুধশিল্প সমিতির মহাসচিব মো. জাকির হোসেন উল্লেখ করেন, “বাংলাদেশে ৩০৭টি ওষুধ কোম্পানি রয়েছে, যার মধ্যে ২৫০ কোম্পানি কার্যকর রয়েছে। আজকে বেলা ১১টার মধ্যে শীর্ষস্থানীয় ৩২ কোম্পানি জানায়, তাদের ২০০ কোটি টাকার উপকরণ পুড়ে গেছে। বাকি কোম্পানিগুলো হিসাব করলে ক্ষতির পরিমাণ আরও বৃদ্ধি পাবে।” একেকটি ওষুধ উৎপাদনে ১০-১২টি থেকে ৫৩টি উপকরণের প্রয়োজন হওয়ায়, ২০০ কোটি টাকার উপকরণ হারানোর ফলে ৩ হাজার থেকে ৫ হাজার কোটি টাকার ওষুধের উৎপাদন ব্যাহত হতে পারে।
বাংলাদেশ এমপ্লেয়ার্স ফেডারেশনের (বিইএফ) সভাপতি ফজলে শামীম এহসান জানান, নির্বাচিত সরকার আসলে পরিস্থিতি পরিবর্তন হতে পারে, ফলে বিনিয়োগকারীরা দেশে ফিরে আসবে। তিনি বলেন, “এই অগ্নিকান্ডে ৫০০ ডলারের ক্ষতি ৫০০ ডলারের সমান নয়। এটি পণ্যের মোট মূল্য। ৫০০ ডলারের সামগ্রিক ক্ষতি অন্তত ২০ হাজার ডলারে পৌঁছাতে পারে।”
বাংলাদেশ গার্মেন্ট অ্যাক্সেসরিজ অ্যান্ড প্যাকেজিং ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএপিএমইএ) সভাপতি মো. শাহরিয়ার জানান, “আমাদের সদস্যদের কাছে এখন পর্যন্ত ২৩ কোটি টাকার মালামাল পুড়ে গেছে। বিভিন্ন জায়গা থেকে প্রাপ্ত স্যাম্পলগুলোও পুড়ে গেছে, যা শিল্পের জন্য একটি বড় ক্ষতি।”
অগ্নিকান্ডের ঘটনার পর ব্যবসায়ীরা সরকারের কাছে ৬টি দাবি জানান। এই দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে: অগ্নিকান্ডে ক্ষতিগ্রস্ত পণ্যের বিমা দাবি দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য নির্দেশনা প্রদান, যেসব পণ্য বিমা করা হয়নি, সেক্ষেত্রে সরকারি বিশেষ তহবিল গঠন করে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা প্রদান এবং ভবিষ্যতের নিরাপত্তার জন্য কার্গো ভিলেজের আধুনিকায়ন ও সম্প্রসারণের ব্যবস্থা। এছাড়া, শিল্পের জন্য শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত আলাদা গুদামের ব্যবস্থা, নিরাপদ দূরত্বে রাসায়নিক গুদাম স্থাপন এবং কার্গো ভিলেজের গুদাম ব্যবস্থাপনাকে অটোমেটেড ও আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর করার প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করেন।