
কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দেশজুড়ে বিক্ষোভ, সংঘর্ষ, সংঘাত, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গ্রেপ্তার অভিযান অব্যাহত রয়েছে। শনিবার (২৭ জুলাই) পর্যন্ত ১১ দিনে মোট গ্রেপ্তারের সংখ্যা ৯ হাজার ছাড়িয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটি জেলায় কিছুসংখ্যক ব্যক্তিকে পুরোনো মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। এ ছাড়া বেশ কিছু জেলায় গ্রেপ্তারের আরও তথ্য জানা গেছে। সব মিলিয়ে গতকাল পর্যন্ত রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে গ্রেপ্তার হয়েছেন ৯ হাজার ১২১ জন। এর আগে গত শুক্রবার পর্যন্ত সারা দেশে সাড়ে ছয় হাজারের বেশি গ্রেপ্তারের তথ্য ছিল।
উল্লেখ্য, কোটাপ্রথা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীরা লাগাতার কর্মসূচি শুরু করেন ১ জুলাই। ১৫ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ঘিরে সংঘর্ষের পর বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে প্রায় সারা দেশে। এর পরদিন থেকে এই আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় হামলা, সংঘর্ষ, সহিংসতা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও হতাহতের ঘটনা ঘটে। বিভিন্ন জায়গায় এসব ঘটনায় মামলা করা হয়েছে। এখনো বিভিন্ন জায়গায় মামলা হচ্ছে।
পুলিশ ও বিভিন্ন সূত্র বলেছে, এ পর্যন্ত যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাদের বেশির ভাগ বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মী। গ্রেপ্তারকৃতদের বেশির ভাগ ব্যক্তিকে দেশের বিভিন্ন কারাগারে পাঠানো হয়েছে। অনেককে রিমান্ডে এনে চলছে জিজ্ঞাসাবাদ।
এছাড়া সূত্র আরও বলছে, এসব ঘটনায় জড়িতদের মধ্যে দল দুটির আরো অনেক নেতাকর্মী আছেন। তাদেরও গ্রেপ্তারে সারা দেশে সাঁড়াশি অভিযান চলছে।

গতকাল মেট্রোরেলে হামলা ও অগ্নিসংযোগের মামলায় বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জহির উদ্দিন স্বপন ও বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক নাসির উদ্দিন আহমেদকে তিন দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দেন আদালত। এ ছাড়া রামপুরায় বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) ভবনে আগুন ও ভাঙচুরের মামলায় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানিসহ তিনজনের সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।
কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে সংঘর্ষ ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা বেশি ঘটেছে রাজধানী ঢাকা ও এর আশপাশে। রাজধানীর উত্তরা, যাত্রাবাড়ী, মহাখালী, বাড্ডা, রামপুরা, মোহাম্মদপুর, ধানমন্ডি, মিরপুর, আজিমপুর, নীলক্ষেতসহ প্রায় পুরো রাজধানীতে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছিল। ঘটনার পর মামলা ও গ্রেপ্তারও বেশি হচ্ছে রাজধানী ও এর চারপাশে।
গত ২১ জুলাই রাত থেকে রাজধানীতে চিরুনি অভিযান শুরু করে পুলিশ ও র্যাব। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় গ্রেপ্তার অভিযানে ‘ব্লক রেইড’ দেওয়া হচ্ছে। সহিংসতায় কারা জড়িত ছিলেন, তা বের করতে ভিডিও ফুটেজ ও ছবি বিশ্লেষণ করে তালিকাও করা হয়েছে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) গতকাল বিকেলে জানায়, গতকাল পর্যন্ত রাজধানীর বিভিন্ন থানায় মোট ২০৭টি মামলা হয়েছে। মোট ২ হাজার ৫৩৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে গতকাল গ্রেপ্তার হয়েছেন ২৫২ জন।
অন্যদিকে র্যাব জানিয়েছে, নাশকতার অভিযোগে সাম্প্রতিক সময়ে তারা ২৯০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। এর মধ্যে ঢাকায় ৭১ জন ও ঢাকার বাইরে ২১৯ জন।

ঢাকা মহানগরের বাইরে ঢাকা জেলার সাভার, ধামরাই, আশুলিয়া, কেরানীগঞ্জ, নবাবগঞ্জ ও দোহারেও চলছে গ্রেপ্তার অভিযান। জেলা পুলিশ সূত্র জানায়, ঢাকা মহানগরের বাইরে ঢাকা জেলায় গতকাল নতুন করে আরও ৪টি মামলা হয়েছে। এ নিয়ে ঢাকা জেলার বিভিন্ন থানায় মোট মামলার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৪। এসব মামলায় গতকাল পর্যন্ত ২০০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
রাজধানী ঢাকার পার্শ্ববর্তী নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুরেও আন্দোলন ঘিরে বিক্ষোভ, সংঘর্ষ, অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছিল। সেখানেও গ্রেপ্তার অভিযান অব্যাহত আছে। নারায়ণগঞ্জে শুক্রবার রাত থেকে গতকাল দুপুর পর্যন্ত আরও ৫১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সেখানে গতকাল আরও ২টি মামলা হয়েছে। গতকাল পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জে ২৪টি মামলা হয়েছে। মোট গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৪৮৭ জনকে।
গাজীপুরেও গতকাল আরেকটি নতুন মামলা হয়েছে। গতকাল পর্যন্ত গাজীপুরে মামলা হয়েছে ৩৭টি। মোট গ্রেপ্তার ৩৯৬ জন।
কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে সংঘর্ষ ও নিহতের ঘটনায় চট্টগ্রাম মহানগরীতে গতকাল নতুন আরও একটি মামলা হয়েছে। গতকাল আকবরশাহ থানায় এই মামলা হয়। গতকাল পর্যন্ত চট্টগ্রাম মহানগর ও জেলা মিলিয়ে মোট মামলা হয়েছে ৩০টি। গতকাল পর্যন্ত এসব মামলায় ৮৮৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

ঢাকা ও চট্টগ্রামের বাইরে উত্তরাঞ্চলের রাজশাহী, বগুড়া ও রংপুরে মামলা এবং গ্রেপ্তার তুলনামূলক বেশি। রংপুরে গতকাল পর্যন্ত মোট ১২টি মামলায় ১৮৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। রাজশাহীতে গতকাল পর্যন্ত মোট ১৭টি মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৩৪৫ জনকে। আর বগুড়ায় মোট ১৫টি মামলায় গতকাল পর্যন্ত ২৯৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।