
জমির মালিকানা নির্ধারণে এতদিন তিনটি বিষয়কেই গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ হিসেবে বিবেচনা করা হতো—দলিল, রেকর্ড (খতিয়ান) ও ভোগদখল। কিন্তু ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন কার্যকর হওয়ার পর মালিকানা নির্ধারণে নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন হয়েছে। এখন এমন একটি মাত্র দলিল বা প্রমাণ থাকলেও কেউ বৈধভাবে জমির মালিকানা দাবি করতে পারবেন, যদিও তার দখল নেই, রেকর্ডে নাম নেই, এমনকি তার নামে দলিলও নেই।
ধরে নেয়া যাক, একজন ব্যক্তি যার কাছে দলিল নেই, রেকর্ড খতিয়ানে নামও নেই, এবং জমিটির দখল থেকেও তিনি দীর্ঘদিন বঞ্চিত। তারপরও যদি তার কাছে জমির খাজনা পরিশোধের বৈধ দাখিলা থাকে এবং তা যদি সিএস বা এসএ রেকর্ডের মালিকদের উত্তরাধিকার সূত্রে হয়ে থাকে—তাহলে কোর্টে মামলার মাধ্যমে তিনি জমিটির প্রকৃত মালিকানা ফিরে পেতে পারেন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বর্তমানে “দলিল যার, জমি তার” এই সূত্রটি শুধুমাত্র দলিলের উপস্থিতির উপর নির্ভর করছে না। দলিল ছাড়াও এমন প্রমাণপত্র যা জমির মালিকানার ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করে, যেমন খাজনা দাখিলা, তা-ও আইনি দলিল হিসেবে গণ্য হচ্ছে।
বিচারিক আদালত এখন শুধু রেকর্ড বা দখল দেখেই সিদ্ধান্ত নিচ্ছে না। বরং বিচার করছে জমির মালিকানার উৎস কোথা থেকে এসেছে এবং সেই উৎসের সঙ্গে বর্তমান দাবিদার ব্যক্তির যুক্তিসংগত সংযোগ (Chain of Ownership) রয়েছে কি না। যদি দেখা যায়, সিএস ও এসএ রেকর্ডে দাবিদারের পূর্বসূরিদের নাম ছিল এবং খাজনা দাখিলা তার আছে—তাহলে আদালত তাকে প্রকৃত মালিক হিসেবে স্বীকৃতি দিতে পারে।
অপরদিকে, যার নামে বর্তমানে দলিল ও রেকর্ড রয়েছে, কিন্তু তিনি যদি রেকর্ডে নিজের নাম অবৈধভাবে বা প্রভাব খাটিয়ে অন্তর্ভুক্ত করে থাকেন, তাহলে সেটি বাতিল হতে পারে। এবং প্রকৃত মালিকের পক্ষে আদালত রায় দিয়ে জমি পুনরুদ্ধার ও রেকর্ড সংশোধনের নির্দেশনা দিতে পারে।
এই আইনি পরিবর্তনের মাধ্যমে দীর্ঘদিন ধরে জমি হারানো প্রকৃত মালিকরা আবার নিজেদের জমির উপর অধিকার প্রতিষ্ঠার সুযোগ পাচ্ছেন। তবে, এটি একই সঙ্গে অন্য পক্ষের জন্য সতর্কতা হিসেবে কাজ করছে—সঠিক উৎস ছাড়া জমি ক্রয় বা দখল করা ভবিষ্যতে আইনি জটিলতায় ফেলতে পারে।
নতুন আইন অনুযায়ী, দলিল না থাকলেও খাজনা দাখিলা এবং মালিকানার ধারাবাহিকতা প্রমাণ করতে পারলে একজন ব্যক্তি জমির প্রকৃত মালিক হিসেবে আদালতে স্বীকৃতি পেতে পারেন। তাই, জমি কেনার আগে শুধু দলিল নয়, রেকর্ড ও খাজনার ইতিহাসও ভালোভাবে যাচাই করা অত্যন্ত জরুরি।
আইনজীবীরা বলছেন: এই আইন একদিকে যেমন জমি দখলদারদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা, অন্যদিকে প্রকৃত মালিকদের জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার পথ।