প্রচ্ছদ বিশ্ব যে কারণে শান্তিতে নোবেল পেয়েছেন ইসরাইলের দুই প্রধানমন্ত্রী

যে কারণে শান্তিতে নোবেল পেয়েছেন ইসরাইলের দুই প্রধানমন্ত্রী

দ্বারা নিজস্ব প্রতিনিধি
০ কমেন্ট 2 মিনিট পড়ুন
যে কারণে শান্তিতে নোবেল পেয়েছেন ইসরাইলের দুই প্রধানমন্ত্রী

মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনৈতিক সংঘাতের মূল কারণ ইসরাইল। প্রতিবেশী আরব দেশগুলোতে অসংখ্য হামলা চালিয়েছে তারা এবং যথারীতি দায়মুক্তিও পেয়েছে। ফিলিস্তিন সংকট সমাধানে বারবার বাগড়া দিয়েছেন ইসরাইলি নেতারাই। এরপরও তাদের দু-একজন ছিলেন ব্যতিক্রম।

এই সংঘাতের মধ্যে শান্তির পথ অন্বেষণের স্বীকৃতি হিসেবে একাধিক ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী ও জ্যেষ্ঠ নেতাকে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। এই সম্মাননা মূলত ইসরাইল ও তার আরব প্রতিবেশীদের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের উদ্দেশ্যে স্বাক্ষরিত দুটি প্রধান চুক্তির কারণে দেওয়া হয়—১৯৭৮ সালের ক্যাম্প ডেভিড চুক্তি এবং ১৯৯৪ সালের অসলো চুক্তি।

মেনাকেম বেগিন ও ক্যাম্প ডেভিড চুক্তি (১৯৭৮)

ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী মেনাকেম বেগিন ১৯৭৮ সালে মিসরের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট আনোয়ার সাদাতের সঙ্গে যৌথভাবে নোবেল শান্তি পুরস্কার লাভ করেন।

ইসরাইল রাষ্ট্রের জন্ম (১৯৪৮) থেকে শুরু করে দীর্ঘ তিন দশক ধরে মিসর ছিল ইসরাইলের অন্যতম প্রধান সামরিক প্রতিপক্ষ। ১৯৭৩ সালের ইয়োম কিপুর যুদ্ধের পরে পরিস্থিতি বদলাতে শুরু করে।

মিসর ও ইসরাইলের মধ্যে ঐতিহাসিক ক্যাম্প ডেভিড অ্যাকর্ডস স্বাক্ষরের ক্ষেত্রে তাদের অসামান্য ভূমিকার জন্য নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়। এই চুক্তির ফলে দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধাবস্থা সমাপ্ত হয় এবং স্বাভাবিক কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা হয়।

১৯৭৭ সালে সাদাত ইসরাইলের পার্লামেন্টে (নেসেট) বক্তব্য দেন, এটি ছিল কোনো আরব নেতার প্রথম এমন সফর। এরপর মার্কিন প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টারের মধ্যস্থতায় যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাম্প ডেভিডে দীর্ঘ আলোচনার পর চুক্তিতে উপনীত হওয়া যায়। চুক্তির প্রধান শর্ত ছিল ইসরাইল সিনাই উপদ্বীপ মিসরের কাছে ফিরিয়ে দেবে এবং মিসর ইসরাইলকে পূর্ণাঙ্গ কূটনৈতিক স্বীকৃতি দেবে।

এই চুক্তি শুধু দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী শান্তির সূচনা করেছিল তা নয়, এটি ছিল ইসরাইলের সঙ্গে আরব দেশের প্রথম পূর্ণাঙ্গ শান্তিচুক্তি। যদিও বেগিনের রাজনৈতিক জীবনের শুরু হয়েছিল কট্টরপন্থি জাবোতিনস্কি আন্দোলনের মধ্য দিয়ে। তিনি একসময় সশস্ত্র সংগঠন ইরগুনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। কিন্তু তার এই শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টাকে নোবেল কমিটি সাহসিকতার প্রতীক হিসেবে দেখেছে।

আইজ্যাক রবিন ও শিমন পেরেস এবং অসলো চুক্তি (১৯৯৪)

১৯৯৪ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার যৌথভাবে পান ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী আইজ্যাক রবিন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী শিমন পেরেস এবং ফিলিস্তিনি মুক্তি সংস্থার (পিএলও) চেয়ারম্যান ইয়াসির আরাফাত।

মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠা এবং ইসরাইল ও ফিলিস্তিনিদের মধ্যে স্বশাসন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে তাদের প্রচেষ্টার জন্য এই সম্মান জানানো হয়। এই প্রচেষ্টা ১৯৯৩ সালে অসলো চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক রূপ পায়।

ফিলিস্তিনিদের প্রথম ইন্তিফাদা (বিদ্রোহ) এবং গোপনে নরওয়ের অসলোতে ইসরাইলি ও ফিলিস্তিনি প্রতিনিধিদের মধ্যে দীর্ঘ আলোচনার পর এই চুক্তি সম্ভব হয়। দীর্ঘদিনের রক্তক্ষয়ী সংঘাতের পর এই আলোচনা ছিল উভয় পক্ষের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।

অসলো চুক্তির ফলে ইসরাইল প্রথমবারের মতো পিএলওকে ফিলিস্তিনি জনগণের বৈধ প্রতিনিধি হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেয়। অন্যদিকে পিএলও ইসরাইলকে স্বীকৃতি দেয়। চুক্তিতে গাজা উপত্যকা এবং পশ্চিম তীরের কিছু অংশে ফিলিস্তিনিদের সীমিত স্বশাসন প্রতিষ্ঠার রূপরেখা দেওয়া হয়। ওয়াশিংটনে চুক্তি স্বাক্ষরের সময় রবিন এবং আরাফাতের ঐতিহাসিক করমর্দন বিশ্বশান্তির ইতিহাসে একটি প্রতীকী মুহূর্ত হিসেবে গণ্য হয়।

এই শান্তি প্রচেষ্টা ইসরাইলের অভ্যন্তরে গভীর রাজনৈতিক বিভাজন সৃষ্টি করেছিল। কট্টর ডানপন্থি ইসরাইলিরা এই চুক্তিকে ‘ঐতিহাসিক বিশ্বাসঘাতকতা’ হিসেবে বিবেচনা করে।

নোবেল শান্তি পুরস্কার পাওয়ার এক বছর পর ১৯৯৫ সালের ৪ নভেম্বর তেল আবিবে একটি শান্তি সমাবেশে আইজ্যাক রবিনকে এক উগ্র ইহুদি জাতীয়তাবাদী গুলি করে হত্যা করে। যারা শান্তির জন্য সর্বোচ্চ আত্মত্যাগ করেছেন, রবিনকে তাদের একজন হিসেবে এখনো স্মরণ করা হয়।

You may also like

মতামত দিন

ঠিকানা

marbanglasongbad logo

আমার বাংলা সংবাদ মিডিয়া এন্ড কমিউনিকেশন পক্ষে প্রকাশক কর্তৃক প্রকাশিত।

প্রকাশক ও সম্পাদক : হাসান মাহমুদ,
বিভাগীয় প্রধান ( অনলাইন): সাইফ উদ্দিন

জনপ্রিয় সংবাদ

নিউজলেটার

সর্বশেষ সংবাদ সবার আগে পেতে নিউজলেটার সাবস্ক্রাইব করুন।

Are you sure want to unlock this post?
Unlock left : 0
Are you sure want to cancel subscription?
-
00:00
00:00
Update Required Flash plugin
-
00:00
00:00