শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্র নিয়ে মিথ্যাচার করেছেন রাষ্ট্রপতি: আইন উপদেষ্টা
শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্রের দালিলিক প্রমাণ হাতে নেই, রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের এমন মন্তব্যে কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল। সোমবার (২১ অক্টোবর) সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এই প্রতিক্রিয়া জানান তিনি।
আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘গত ৫ আগস্ট রাষ্ট্রপতি জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণে বলেছিলেন শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেছেন এবং তিনি সেটা গ্রহণ করেছেন। এখন আড়াই মাস পর বলছেন, তাঁর কাছে শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্র নেই। এমন কথা বলা স্ববিরোধিতা।’
আসিফ নজরুল বলেন, তিন বাহিনী প্রধানকে পেছনে রেখে পদত্যাগ করেছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী। সেটি তিনি (রাষ্ট্রপতি) গ্রহণও করেছেন। প্রায় আড়াই মাস পরে পদত্যাগ করেননি বলা মিথ্যাচার এবং শপথ লঙ্ঘনের সামিল। এতে তিনি তার পদে থাকার যোগ্যতা হারিয়েছেন কিনা, সেটা ভেবে দেখতে হবে।
আসিফ নজরুল দাবি করেন, ‘তিনি (রাষ্ট্রপতি) মিথ্যাচার করেছেন, যা শপথ ভঙ্গের সামিল। তার বক্তব্যে অটল থাকলে তিনি পদে থাকতে পারেন কিনা তা উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে আলোচিত হতে পারে।’
সম্প্রতি দৈনিক মানবজমিনের প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরীর সঙ্গে আলাপকালে রাষ্ট্রপতি জানান, শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন এমন কোনো দালিলিক প্রমাণ তাঁর কাছে নেই।
কথোপকথনটি সম্প্রতি একটি রাজনৈতিক ম্যাগাজিন এ প্রকাশিত হয়েছে।
গত ৫ আগস্টের বর্ণনায় রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন মতিউর রহমান চৌধুরীকে বলেন, ‘চারদিকে অস্থিরতার খবর। কী হতে যাচ্ছে জানি না। আমি তো গুজবের ওপর নির্ভর করে বসে থাকতে পারি না। তাই সামরিক সচিব জেনারেল আদিলকে বললাম খোঁজ নিতে। তাঁর কাছেও কোনো খবর নেই। আমরা অপেক্ষা করছি। টেলিভিশনের স্ক্রলও দেখছি। কোথাও কোনো খবর নেই। এক পর্যায়ে শুনলাম, তিনি দেশ ছেড়ে চলে গেছেন। আমাকে কিছুই বলে গেলেন না। যা সত্য তাই আপনাকে বললাম। যাই হোক, সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার যখন বঙ্গভবনে এলেন তখন জানার চেষ্টা করেছি প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করেছেন কি না? একই জবাব। শুনেছি তিনি পদত্যাগ করেছেন। মনে হয় সে সময় পাননি জানানোর।’
রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘সব কিছু যখন নিয়ন্ত্রণে এলো তখন একদিন মন্ত্রিপরিষদ সচিব এলেন পদত্যাগপত্রের কপি সংগ্রহ করতে। তাঁকে বললাম, আমিও খুঁজছি।’
একপর্যায়ে রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন মতিউর রহমানকে বলেন, ‘এ নিয়ে আর বিতর্কের কিছু নেই। প্রধানমন্ত্রী চলে গেছেন এটাই সত্য। তারপরও কখনো যাতে এ প্রশ্ন না উঠে সে জন্য সুপ্রিম কোর্টের মতামত নিয়েছি।’
তাঁর পাঠানো রেফারেন্সের পরিপ্রেক্ষিতে গত ৮ আগস্ট তৎকালীন প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ এ মতামত দেন।
এতে বলা হয়, সাংবিধানিক শূন্যতা দূর করতে এবং নির্বাহী বিভাগ সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা যেতে পারে এবং প্রেসিডেন্টকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও অন্যান্য উপদেষ্টাদের শপথ গ্রহণের অনুমতি দেওয়া যেতে পারে।
এক প্রশ্নের জবাবে আইন উপদেষ্টা বলেন, ৫ আগস্ট রাত ১১টা ২০ মিনিটে তিন বাহিনীর প্রধানকে পেছনে রেখে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন রাষ্ট্রপতি। সেটি টিভিতে লাইভ সম্প্রচার হয়। যেখানে জাতির উদ্দেশে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী (শেখ হাসিনা) পদত্যাগপত্র দিয়েছেন এবং তিনি সেটি গ্রহণ করেছেন। এর আড়াইমাস পরে এসে তিনি কন্ট্রাডিকটরি কথা (আগের বক্তব্যের সাথে সাংঘর্ষিক) বলতে পারেন না।
তিনি আরও বলেন, এমন মন্তব্যের পর উপদেষ্টা পরিষদে আলোচনা হতেই পারে যে তিনি গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকার জন্য মানসিকভাবে সক্ষম কিনা।