
ইসলামি পরিভাষায় ধর্মীয় কাজের জন্য চিরস্থায়ীভাবে নিজের মালিকানাধীন সম্পদকে কোনো ধরণের দাবি না রেখে উৎসর্গ করাই হচ্ছে ওয়াকফ। ওয়াকফ এর শাব্দিক অর্থ বন্দীত্ব। নিষিদ্ধকরণ ইত্যাদী। যার মালিকানা নিষিদ্ধ করা হয়েছে এমন সম্পদ।
ওয়াকফের সম্পত্তি বিক্রি করা, এওয়াজ-বদল করা জায়েজ নয়। বিশেষত ওয়াকফকারী যদি বিক্রি না করার কথা উল্লেখ করেন তখন তা বিক্রি করার কোনো সুযোগ থাকে না।
হাদিস শরিফে আছে, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. বলেন, উমর রা. রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বললেন, আল্লাহর রসুল! আমি একটি উত্তম সম্পদের মালিক হয়েছি (একটি খেজুর বাগান)। আমি তা সদকা (ওয়াকফ) করতে চাই।
রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি মূল সম্পত্তিটি এভাবে সদকা (ওয়াকফ) কর যে, তা বিক্রি করা যাবে না, কাউকে দান করা যাবে না।
এতে উত্তরাধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে না। এর থেকে উৎপন্ন ফলফলাদি (নির্ধারিত খাতে) ব্যয় হবে। এরপর হযরত উমর রা. তা ঐভাবে সদকা (ওয়াকফ) করলেন। (সহিহ বুখারি ২৭২৪)
হযরত ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, ওমর (রা.) খায়বরে একখণ্ড জমি পান। তখন তিনি নবী (সা.) এর নিকট এসে বলেন, আমি এমন এক খন্ড জমি পেয়েছি, যা থেকে উত্তম কোনো মাল ইতোপূর্বে আর পাইনি। আপনি এ ব্যাপারে আমাকে কি নির্দেশ দেন?
তিনি (সা.) বলেন,
যদি তুমি চাও, তবে আসল জমিটা রেখে দাও এবং এ থেকে উৎপন্ন ফসল দান করে দাও। তখন ওমর (রা.) তা থেকে উৎপন্ন ফসল দান করতে থাকেন এবং তিনি এরূপ সীদ্ধান্ত নেন যে, আসল জমি বিক্রি করবেন না, হিবা বা দানও করবেন না এবং উত্তরাধিকারীদেরও দেবেন না; বরং তা থেকে ফকির, নিকটাত্মীয়, গোলাম, মিসকিন এবং মুসাফিররা আল্লাহর ওয়াস্তে উপকৃত হতে থাকবে। (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ২৮৭৮)
ওয়াকফ সম্পত্তি বিক্রি করা যাবে না আইনের ৩ ধারা ও একটি দফা অবৈধ ঘোষণা :
২০১৩ সালের ওয়াকফ হস্তান্তর ও উন্নয়ন আইনের তিনটি ধারা ও একটি দফা অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট।
এর ফলে ওয়াকফ প্রশাসক এখন থেকে সম্পত্তি হস্তান্তর, বিক্রি বা রিয়েলস্টেট কোম্পানিকেও দিতে পারবেন না।
রায়ে ওয়াকফ (সম্পত্তি হস্তান্তর ও উন্নয়ন) আইনের ৩, ৪(চ), ৮ ও ১২ ধারা অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করেছেন আদালত।প্রবীণ আইনজীবী এ বি এম নুরুল ইসলাম বলেন, রাসূল (সা:) জীবিত অবস্থা থেকে ওয়াকফের বিধান চালু হয়েছে। এটা কুরআন নির্দেশিত পন্থা।
যার অঢেল সম্পত্তি রয়েছে, তিনি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ওয়াকফে তার সম্পত্তির কিছু অংশ দান করে থাকেন। ওয়াকফ সম্পত্তির আয় থেকে তিনটি উদ্দেশ্যে ব্যয় করা যাবে যথাÑ ধর্মীয়, দাতব্য ও মানবহিতৈষী কাজে। অন্য কোনো কাজে এ সম্পত্তি হস্তান্তরযোগ্য নয়।
তিনি বলেন, ২০১৩ সালের সরকার বিশেষ আইন ওয়াকফ (সম্পত্তি হস্তান্তর ও উন্নয়ন) প্রণয়ন করে। এ আইনের ৩ ধারায় আইনটিকে সব আইনের থেকে প্রাধান্য দেয়া হয়। পাশাপাশি ওয়াকফ সম্পত্তি হস্তান্তরের বিধান রাখা হয়। আইনে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে প্রশাসক-ওয়াকফ সম্পত্তি ঢাকায় বসে একটি কমিটি গঠনের মাধ্যমে হস্তান্তর বা অংশীদারিত্বের দেখভাল করছেন। ওই কমিটিতে মোতাওয়াল্লি, স্থানীয় ব্যক্তিবর্গ বা প্রশাসন সম্পৃক্ত নন। ফলে গত পাঁচ বছরে উন্নয়নের নামে অনেক ওয়াকফ সম্পত্তি হস্তান্তর হয়ে গেছে।
হাইকোর্ট রুল নিষ্পত্তি করে আইনের তিনটি ধারা ও একটি উপধারা বাতিল ঘোষণা করেছেন। ফলে এখন থেকে ওয়াকফ প্রশাসকের ক্ষমতা খর্ব হলো। তিনি আর সম্পত্তি হস্তান্তর করতে পারবেন না।
এর আগে ২০১৩ সালে আইনজীবী এ বি এম নুরুল ইসলাম ওই আইনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে জনস্বার্থে রিট আবেদন করেছিলেন।
আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন প্রবীণ আইনজীবী এ বি এম নুরুল ইসলাম। তার সাথে ছিলেন আইনজীবী মো: গিয়াসউদ্দিন আহম্মেদ, মো: মহিউদ্দিন প্রমুখ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।
আইনের ৩ ধারায় আইনের প্রাধান্য ৪ (চ) ধারায় হস্তান্তর পদ্ধতি-অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে উন্নয়নের জন্য হস্তান্তরের মাধ্যমে, ৮ ধারায় হস্তান্তরের উদ্দেশ্যে বিশেষ কমিটি এবং ১২ ধারায় অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে উন্নয়নের জন্য হস্তান্তরের বিধান রয়েছে।
২০১৩ সালে ওয়াকফ (সম্পত্তি হস্তান্তর ও উন্নয়ন) আইনের বিধান চ্যালেঞ্জ করে রিটের পর ওই বছরের ২৯ এপ্রিল হাইকোর্ট আইনটি কেন অসাংবিধানিক এবং ওয়াকফসংক্রান্ত অন্যান্য আইনের পরিপন্থী হবে না তার কারণ জানতে চেয়ে রুল জারি করেন। কয়েক কার্যদিবস শুনানি শেষে রুল যথাযথ ঘোষণা করে এ রায় দেন হাইকোর্ট।