ঘুরেফিরে সময়টা আবার চলে এসেছে। বৈশ্বিক বা মহাদেশীয় যেকোনো টুর্নামেন্টের এক পর্যায়ে বাংলাদেশকে সেমিফাইনালে তোলার জন্য বিভিন্ন সমীকরণের খোঁজ নিতে হয়। গতকাল ভারতের কাছে ৫০ রানে হেরে যাওয়ার পর মনে হয়েছিল, এবার আর এসব সমীকরণের দরকার হবে না, আজ সকালেই সব সমীকরণ চুকিয়ে বিদায় নিশ্চিত হবে বাংলাদেশের।
কিন্তু আজ সকালে অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে দিয়েছে আফগানিস্তান। আর তাতেই এখনো সেমিফাইনাল খেলার সুযোগ টিকে আছে বাংলাদেশের।

শুরুতেই বলে নেওয়া যাক, সমীকরণটা ৮৬ রানের। আফগানিস্তানকে বাংলাদেশ হারাবে এবং অস্ট্রেলিয়াকে ভারতের কাছে হারতে হবে। এবং এরপর ৮৬ রানের হিসেব মিলাতে হবে। সেন্ট লুসিয়ায় সকালে ভারত যদি অস্ট্রেলিয়াকে ১ রানে হারায়। রাতে সেন্ট ভিনসেন্টে বাংলাদেশকে জিততে হবে অন্তত ৮৫ রানে। অর্থাৎ, এই দুই ম্যাচের ব্যবধানের যোগফল অন্তত ৮৬ রানের।
৮৫ রান হলে বাংলাদেশ ও অস্ট্রেলিয়ার রানরেট সমান হয়ে যাবে। কিন্তু মুখোমুখি লড়াইয়ে এগিয়ে থাকায় অস্ট্রেলিয়াই যাবে শেষ চারে। এখন বাংলাদেশ আফগানিস্তানকে ৮৫ রানে হারাবে, এত বড় গুরু দায়িত্ব যদি শান্ত-লিটনদের কাঁধে দিতে না চান তাহলে ভাগ করে দিন সে দায়িত্ব। ভারত অস্ট্রেলিয়াকে হারাবে ৮৫ রানে আর বাংলাদেশের জয় হবে ১ রানের। না, এমনটা হলে আবার চলবে না চন্ডিকা হাথুরুসিংহের দলের।
কারণ, এখানে তৃতীয় পক্ষ হিসেবে আফগানিস্তানও থাকবে। ফলে অস্ট্রেলিয়া ভারতের কাছে যত বড় ব্যবধানেই হারুক না কেন, আফগানিস্তানকে বাংলাদেশ যদি অন্তত ৩১ রানে হারাতে না পারে, তখন রানরেটে বাংলাদেশকে টপকে আফগানিস্তানই যাবে সেমিফাইনালে।
বাংলাদেশের একটাই সুবিধা, আগের ম্যাচের ফল জেনে তারা মাঠে নামতে পারবে। যদি অস্ট্রেলিয়া জিতে যায় তাহলে তো নিয়ম ও সম্মানরক্ষার ম্যাচে নামবেন সাকিব আল হাসানরা। আর অস্ট্রেলিয়া হেরে যায়, তখন অন্তত ৮৬ রানের সমীকরণ মেলানো।
কিন্তু এসব তো রান ব্যবধানে জয়ের হিসাব। কিন্তু যদি ভারত রান তাড়া করে জেতে এবং বাংলাদেশ আগে ফিল্ডিং করে তখন?
তখন হিসেবটা বেশ জটিল হয়ে উঠবে।
ধরা যাক, প্রথম ম্যাচে অস্ট্রেলিয়াকে ভারত ১৫০ রানে আটকে দিল। এবং বাংলাদেশ বা আফগানিস্তানকে সেমিফাইনালে তোলার ধনু ভাঙা প্রতিজ্ঞা নিয়ে ম্যাচটা ১৫ ওভারেই জিতে গেল। তাহলে বাংলাদেশের কাজটা তো সহজ হয়ে গেল, তাই না?
উঁহুঁ। সেক্ষেত্রে আফগানিস্তানকে ১৫০ রানে আটকে ফেললে বাংলাদেশকে সে রান তাড়া করতে হবে ১৪ ওভার ৩ বলের মধ্যে। আর যদি ঠিক ১৫০ রানে দাঁড়িয়ে ছক্কা মারা হয়, তাহলে ১৫ ওভার ১ বল পর্যন্ত ম্যাচ টানার সুযোগ পাবে বাংলাদেশ। এর চেয়ে বেশি ওভারে ম্যাচ গেলেই বাদ বাংলাদেশ।
ধরা যাক, সেন্ট ভিনসেন্টের কঠিন উইকেটে আফগানিস্তানকে ১১০ রানেই আটকে দিল বাংলাদেশ। তখন? তাতে একটু লাভ হবে। তখন ১৪ ওভারের মধ্যে ম্যাচ জিততে হবে। আর ছক্কা মেরে শেষ করলে আরও ৪ বল বাড়তি পাওয়া যাবে।
সেন্ট ভিনসেন্টে ১১০ রানে অলআউট হওয়ার চিন্তা অমূলক নয়, অস্ট্রেলিয়াই আজ ১২৭ রানে থেমেছে। তবে সেন্ট লুসিয়ায় অস্ট্রেলিয়া ১৫০ রানে থামবে সেটা চিন্তা করা একটু কঠিন। অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিং লাইনআপ যদি ১৭০ রান তুলে ফেলে তখন?
সেক্ষেত্রে ভারত যদি আবারও প্রতিবেশী দুই দলকে সুবিধা করে দিতে পাগলাটে ব্যাট করে ১৫ ওভারে ম্যাচ শেষ করে আসে, তখন বাংলাদেশকে ম্যাচ (১১১ রানের লক্ষ্যে) শেষ করতে হবে ১৪ ওভার ২ বলে। আর ছক্কা মেরে শেষ করতে পারলে আবারও ৪ বল বাড়তি পাওয়া যাবে, অর্থাৎ ১৫ ওভার।
কিন্তু ধরা যাক, ভারত এতটা পাগলাটে ব্যাটিং করতে পারল না। ১৭ ওভার দরকার হলো ১৭০ তাড়া করতে। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশকে ১২ ওভার ১ বলের মধ্যে ১১১ রান করতে হবে। আর আফগানিস্তানকে ১৫০ করতে দিলে সে লক্ষ্য ১৩ ওভারের আগেই ছুঁয়ে ফেলতে হবে। এবং, হ্যাঁ দুই ক্ষেত্রেই ছক্কা মারলে ৪ বল বাড়তি মিলবে।
কিন্তু বাস্তব চিন্তায় যদি ফিরে যাওয়া যায়? ভারত ১৫০ বা ১৭০ রানের লক্ষ্য পেল এবং সে লক্ষ্য তারা একদম ইনিংসের শেষ বলে গিয়ে মেলাল? সেক্ষেত্রে ১১১ রানের লক্ষ্য ৯ ওভার ৩ বলেই মিলাতে হবে। লক্ষ্যটা ১৫১ হলে যা ১০ ওভার ৩ বলে ঠেকবে। আর ১৩১ হলে? ঠিক ১০ ওভার।
হিসেবটা নিশ্চয় বুঝে ফেলেছেন এতক্ষণে। পরে ব্যাট করলে দুই ম্যাচের হিসেব মিলিয়ে বাংলাদেশকে ৬০ থেকে ৬৬ বল আগে ম্যাচ শেষ করতে হবে। লক্ষ্য বেশি হলে বলের হিসেব ৬০-এর দিকে যাবে, লক্ষ্য কম হলে ৬৬ এর দিকে।
অর্থাৎ রানের হিসেবে ৮৬ রান আর বলের হিসেবে ৬৩ বল- এই হিসেব নিয়ে খেলতে নামবে বাংলাদেশ।
এবং সেটাও যদি, এবং কেবল যদি অস্ট্রেলিয়া ভারতের কাছে হেরে যায় তখন।