গুম ও নির্যাতনের ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের মামলায় অভিযুক্ত ১৫ সেনা কর্মকর্তাকে গ্রেফতারে সরকারের নির্দেশের অপেক্ষায় পুলিশ। অভিযুক্ত ১৫ কর্মকর্তা বেশ কয়েকদিন ধরে সেনা হেফাজতে আছেন। গত ৮ অক্টোবর তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। পরোয়ানা জারির পর বেশ কয়েকদিন অতিবাহিত হয়েছে। প্রসিকিউশন বিভাগের মতে, গ্রেফতারের এখতিয়ার একমাত্র আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তথা পুলিশের। যদি পুলিশ তাদের গ্রেফতার করে তখন আইন প্রযোজ্য হবে। সেক্ষেত্রে গ্রেফতারের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে আনতে হবে। ট্রাইব্যুনালে অভিযুক্ত সেনা কর্মকর্তাদের সেনা আইনে বিচারের দাবি জানিয়েছে এক্স-ফোর্সেস অ্যাসোসিয়েশন। সংগঠনটির দাবি, প্রয়োজনে সেনা আইন সংশোধন করে গুমের মতো গুরুতর অপরাধে জড়িত কর্মকর্তাদের বিচার নিশ্চিত করতে হবে।
এদিকে জানতে চাইলে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার শেখ সাজ্জাত আলী মঙ্গলবার বলেন, বিষয়টি অনেকটা নির্ভর করছে সেনাবাহিনীর ওপর। আমাদের তেমন কিছু করার নেই। যারা হেফাজতে আছেন তাদের আমরা গ্রেফতার করব নাকি সেনা আইনে বিচার হবে-সে বিষয়ে আমি এখনো কিছুই জানি না। আমাদের যা হুকুম দেবে আমরা তাই করব। কোর্টের আদেশ এখনো আমরা পাইনি। সেনাবাহিনী থেকে যদি আমাদের কিছু বলে তাহলে আমরা তাদের সহযোগিতা করব। তাদের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ চলছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অনেকগুলো গ্রেফতারি পরোয়ানা ঢাকার বাইরে চলে গেছে। সেগুলো আনা হচ্ছে। এছাড়া আরও কিছু প্রক্রিয়া চলছে। এদিকে পুলিশ সদর দপ্তরের উচ্চপদস্থ এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ঢাকা সেনানিবাসের একটি ভবনকে রোববার সাময়িকভাবে কারাগার ঘোষণা করা হয়েছে। ১৫ সেনা কর্মকর্তাকে গ্রেফতার দেখানোর পর আদালতে হাজির করা হবে। আদালত নির্দেশ দিলে তাদের সেনানিবাসের সাময়িক কারাগারে রাখা হবে। সাময়িক কারাগারটি পরিচালিত হবে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের অধীনে।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব খলিল আহমেদ বলেন, ‘বিষয়টি খুবই সেনসেটিভ। আমি বলব না যে, এ নিয়ে কিছু জানি না। অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আমার জানা আছে। কারণ এ সংক্রান্ত ডেক্সটির দায়িত্ব আমার। কিন্তু আমার হাত-পা বাঁধা। তাই কোনো তথ্য দিতে পারছি না। কিছু বললে সচিব মহোদয় বলতে পারেন।’
হেফাজতে থাকা সেনা কর্মকর্তাদের বিষয়ে তথ্য জানতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনির মোবাইল নম্বরে ফোন করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। মঙ্গলবার তার কার্যালয়ে গেলে জানানো হয়, ‘সচিব মহোদয় মন্ত্রণালয়ের বাইরে একটি মিটিংয়ে আছেন।’
কারা অধিদপ্তরের এআইজি জান্নাতুল ফরহাদ বলেন, সাময়িক কারাগার ঘোষণার বিষয়ে আমরা অবগত। ওই কারাগারটি পরিচালিত হবে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের অধীনে। এর বাইরে এই মুহূর্তে কোনো তথ্য আমাদের কাছে নেই। সেখানে কারা থাকবে, কোন পদমর্যাদার কর্মকর্তারা দায়িত্ব পালন করবেন, কারাগারটি কতদিন মেয়াদের হবে-এসব বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো নির্দেশনা আসেনি। নির্দেশনা পাওয়ার পর আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নেব। এদিকে হেফাজতে থাকা অভিযুক্ত সেনা কর্মকর্তাদের সুষ্ঠু বিচারের জন্য সেনা আইন সংশোধনের দাবি জানিয়েছে এক্স-ফোর্সেস অ্যাসোসিয়েশন। মঙ্গলবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনী হলে এক সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি। ‘গুজব নয়, দেশপ্রেমে ঐক্য : সেনাবাহিনী ও জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টির অপচেষ্টা প্রতিহতকরণ প্রসঙ্গে’ শিরোনামে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজক এক্স-ফোর্সেস অ্যাসোসিয়েশন।
এতে সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক লেফটেন্যান্ট (অব.) সাইফুল্লাহ খান সাইফ লিখিত বক্তৃতায় বলেন, আমরা অপরাধীদের বিচারের পক্ষে। তবে সেই বিচার হতে হবে স্বচ্ছ, সুনির্দিষ্ট প্রমাণের ভিত্তিতে এবং সংবিধান ও মানবাধিকারের মূলনীতির আলোকে, যেখানে কোনো ফুলস্টপ থাকবে না। আর্জেন্টিনা, চিলি, মেক্সিকো ও তুরস্কে সেনা আইন সংশোধনের মাধ্যমে ডিক্টেটরদের বিচার হয়েছে। বাংলাদেশেও প্রয়োজনে সেই পথ অনুসরণ করা যেতে পারে। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ও সেনাবাহিনীর মধ্যে সমন্বয় রেখে ম্যানুয়াল অব ব্যাঞ্জিন মিলিটারি আইন (এমবিএমএল) সংশোধন করে বিচার কার্যক্রম পরিচালনা করা উচিত। এভাবে যদি করা না হয়, তবে ভবিষ্যতে এ বিচারের স্থায়িত্ব বা টিকে থাকার সম্ভাবনা কম।
প্রসঙ্গত, সেনানিবাসের একটি ভবনকে সাময়িক কারাগার ঘোষণা সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জারি করে রোববার। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ‘ঢাকা সেনানিবাসের বাশার রোডসংলগ্ন উত্তরদিকে অবস্থিত ‘এমইএস বিল্ডিং নম্বর-৫৪’কে সাময়িকভাবে কারাগার হিসাবে ঘোষণা করা হলো।’ এর আগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের মামলায় অভিযুক্ত ১৫ সেনা কর্মকর্তাকে হেফাজতে নিয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। ১১ অক্টোবর শনিবার সাংবাদিকদের এ সংক্রান্ত তথ্য দেওয়া হয়। সোমবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, আসামিকে গ্রেফতার করার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে আনতে হবে। তারপর আদালত যেখানে আসামিকে রাখতে বলবেন, আসামি সেখানে থাকবেন।