প্রচ্ছদ মতামত রমজান মাসে বিশেষ আমল

রমজান মাসে বিশেষ আমল

দ্বারা নিজস্ব প্রতিনিধি
০ কমেন্ট 5 মিনিট পড়ুন
রমজান মাস
রমজান মাসে বিশেষ আমল

পবিত্র রমজান মাস হল নিজেকে পরিশুদ্ধ ও তাকওয়া অর্জনের জন্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি মাস। এই মাসে একজন মানুষ চাইলে আল্লাহর কাছে ক্ষমা পেতে পারে। তাই রমজান মাসে বেশি বেশি আমল করার জন্য বিশেষজ্ঞ আলেমগণ বলেছেন। কারণ রমজান মাসে একটি আমলের জন্য ৭০ বা তার চেয়েও বেশি নেকি পাওয়া যায়। এই ১ আমলের জন্য ৭০ বা তার চেয়েও বেশি সাওয়াব পেতে হলে সে ভাবেই নিজেকে সংযত রাখতে হবে। তার জন্যে কিছু আমল সব সময় করতে হবে এবং কিছু কাজ বর্জন করতে হবে।

তার আগে বলে রাখা ভালো ৪ টি আমল সব সময়-ই করবেন
** আল্লাহর জন্য ২ টি আমল…
১. কালেমার সর্বোত্তম তাসবিহ- لَا اِلَهَ اِلَّا الله( ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ ) সবসময় পাঠ করা।
২. আল্লাহর কাছে বেশি বেশি ইসতেগফার পাঠ করা তথা ক্ষমা প্রার্থনা করা।
** নিজের জন্য ২ টি আমল…
৩. আল্লাহর কাছে জান্নাত প্রার্থনা করা।
৪. জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি চাওয়া।

করণীয় আমল সমূহঃ
[১] সিয়াম পালন করা- আল্লাহপাক পবিত্র কোরআনে বলেছেন, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেরূপ ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের ওপর, যেন তোমরা পরহেজগারি অর্জন করতে পার।’ (সূরা আল-বাক্বারাহ, ১৮৩)
[২] রমজানের চাঁদ দেখা- হাদিসে বলা হয়েছে, আবু হোরায়ারা থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেছেন, ‘তোমরা চাঁদ দেখে সিয়াম আরম্ভ করবে এবং চাঁদ দেখে ইফতার করবে (ঈদ পালন)।’ (সহিহ বুখারি-হাদিস নং ১৯০৯)
[৩] সময় মত সালাত আদায় করা- সিয়াম পালনের সাথে সাথে সময় মত নামায আদায় করার মাধ্যমে জান্নাতে যাওয়ার পথ সুগম হয়। কুরআন মাজীদে বলা হয়েছে: ‘নিশ্চয় সালাত মুমিনদের উপর নির্দিষ্ট সময়ে ফরয।’ [সূরা নিসা : ১০৩]
[৪] সহীহভাবে কুরআন শেখা- রমাদান মাসে কুরআন অবতীর্ণ করা হয়েছে। এ মাসের অন্যতম আমল হলো সহীহভাবে কুরআন শেখা। আর কুরআন শিক্ষা করা ফরয করা হয়েছে। কেননা কুরআনে বলা হয়েছে:‘‘পড় তোমার রবের নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন’’ [সূরা আলাক : ১]
[৫] অপরকে কুরআন পড়া শেখানো- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: ‘‘তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ব্যক্তি সেই, যে নিজে কুরআন শিক্ষা করে ও অপরকে শিক্ষা দেয়’’ [সহীহ আল-বুখারী : ৫০২৭]
[৬] সালাতুত তারাবীহ পড়া- হাদীসে এসেছে: ‘যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে সাওয়াব হাসিলের আশায় রমাদানে সালাতুত তারাবীহ আদায় করবে, তার অতীতের সব গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে’ [সহীহ আল-বুখারী : ২০০৯]
[৭ ] সাহরী খাওয়া- সাহরী খাওয়ার মধ্যে বরকত রয়েছে এবং সিয়াম পালনে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। হাদীসে এসেছে: ‘‘সাহরী হল বরকতময় খাবার। তাই কখনো সাহরী খাওয়া বাদ দিয়ো না। এক ঢোক পানি পান করে হলেও সাহরী খেয়ে নাও। কেননা সাহরীর খাবার গ্রহণকারীকে আল্লাহ তা‘আলা ও তাঁর ফেরেশতারা স্মরণ করে থাকেন’’ [মুসনাদ আহমাদ : ১১১০১, সহীহ]
[৮] অধিক দান-সদকা করা- আল্লাহর রাসূল (সা.) রমজান মাসে বেশি বেশি দান-সদকা করতেন। তাই আমাদেরও উচিত রমজান মাসে বেশি বেশি দান-সদকা করা।[সহীহ আল-বুখারী : ১৯০২]
[৯] ওমরা করা- রমজান মাসের বিশেষ আমল হলো সামর্থ্য থাকলে ওমরা করা।
১০. ইতেকাফ করা- রমজান মাসের শেষ ১০ দিন মসজিদে ইতেকাফ করা গুরুত্বপূর্ণ একটি আমল।
[১১]বেশি বেশি কুরআন তিলাওয়াত করা- এটি কুরআনের মাস। তাই এ মাসে অন্যতম কাজ হলো বেশি বেশি কুরআন তিলাওয়াত করা। [সুনান আত-তিরমিযী: ২৯১০, সহীহ]
[১২] শুকরিয়া আদায় করা- আল্লাহ তা’আলার বেশি বেশি শুকরিয়া আদায় করা এবং আগামী রমাদান পাওয়ার জন্য তাওফীক কামনা করা।
[১৩] কল্যাণকর কাজ বেশি বেশি করা- হাদীসে এসেছে এ মাসের প্রত্যেক রাতে একজন ঘোষণাকারী এ বলে আহবান করতে থাকে যে, হে কল্যাণের অনুসন্ধানকারী তুমি আরো অগ্রসর হও! হে অসৎ কাজের পথিক, তোমরা অন্যায় পথে চলা বন্ধ কর। (তুমি কি জান?) এ মাসের প্রতি রাতে আল্লাহ তায়ালা কত লোককে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিয়ে থাকেন’’ [সুনান আত-তিরমিযী : ৬৮৪]
[১৪] দাওয়াতের কাজ করা- মানুষকে আল্লাহর দিকে ডাকা উত্তম কাজ। এজন্য এ মাসে মানুষকে দ্বীনের পথে নিয়ে আসার জন্য আলোচনা করা, কুরআন ও হাদীসের দারস প্রদান, বই বিতরণ, কুরআন বিতরণ ইত্যাদি কাজ বেশি বেশি করা। আলকুরআনের ঘোষণা : ‘‘ঐ ব্যক্তির চাইতে উত্তম কথা আর কার হতে পারে যে আল্লাহর দিকে ডাকলো, নেক আমল করলো এবং ঘোষণা করলো, আমি একজন মুসলিম [সূরা হা-মীম সাজদাহ : ৩৩]
[১৫]বেশি বেশি দোয়া ও কান্নাকাটি করা- দোয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদাত। এজন্য এ মাসে বেশি বেশি দোয়া করা ও আল্লাহর নিকট বেশি বেশি কান্নাকাটি করা। হাদীসে এসেছে: ‘‘ইফতারের মূহূর্তে আল্লাহ রাববুল আলামীন বহু লোককে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিয়ে থাকেন। মুক্তির এ প্রক্রিয়াটি রমাদানের প্রতি রাতেই চলতে থাকে’’ [আল জামিউস সাগীর : ৩৯৩৩]
[১৬]অন্য রোজাদার ব্যক্তিকে ইফতার করানো- রমজান মাসের অন্যতম একটি সওয়াবের কাজ অন্য রোজাদার ব্যক্তিকে ইফতার করানোর চেষ্টা করা। [সুনান ইবন মাজাহ : ১৭৪৬, সহীহ]
[১৭] ফজরের পর সূর্যোদয় পর্যন্ত মাসজিদে অবস্থান করা- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: যে ব্যক্তি ফজর জামাআত আদায় করার পর সূর্য উদয় পর্যন্ত মাসজিদে অবস্থান করবে, অতঃপর দুই রাকাআত সালাত আদায় করবে, সে পরিপূর্ণ হাজ্জ ও উমারাহ করার প্রতিদান পাবে। [সুনান আত-তিরমিযী : ৫৮৬]
[১৮] ফিতরাহ দেয়া- এ মাসে সিয়ামের ত্রুটি-বিচ্যুতি পূরণার্থে ফিতরাহ দেয়া আবশ্যক। ইবনে উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদের সালাত আদায়ের পুর্বে ফিতরাহ আদায় করার আদেশ দিলেন। [সহীহ আল-বুখারী :১৫০৩]
[১৯] আল্লাহর যিকির করা- এ বিষয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: ‘‘আল্লাহ তা’আলা চারটি বাক্যকে বিশেষভাবে নির্বাচিত করেছেন, তাহলো যে ব্যক্তি পড়বে, তার জন্য দশটি সাওয়াব লেখা হয়, আর বিশটি গুনাহ মিটিয়ে দেয়া হয়। যে ব্যক্তি পড়বে, তার জন্য বিশটি সাওয়াব লেখা হয়, আর বিশটি গুনাহ মিটিয়ে দেয়া হয়। যে ব্যক্তি পড়বে, তার জন্য বিশটি সাওয়াব লেখা হয়, আর বিশটি গুনাহ মিটিয়ে দেয়া হয়। আর যে ব্যক্তি আন্তরিকভাবে পড়বে, তার জন্য ত্রিশটি সাওয়াব লেখা হয়, আর ত্রিশটি গুনাহ মিটিয়ে দেয়া হয়’’। [মুসনাদ আহমাদ : ১১৩৪৫]
[২০] অপরকে খাদ্য খাওয়ানো- রমাদান মাসে সিয়াম পালনকারী গরীব, অসহায়কে খাদ্য খাওয়ানো বিরাট সাওয়াবের কাজ । কুরআনে এসেছে: তারা খাদ্যের প্রতি আসক্তি থাকা সত্ত্বেও মিসকীন, ইয়াতীম ও বন্দীকে খাদ্য দান করে। [সূরা আদ-দাহর: ৮]

তোমাদের প্রতি তোমাদের রবের পক্ষ থেকে যা নাযিল করা হয়েছে, তা অনুসরণ কর এবং তাকে ছাড়া অন্য অভিভাবকের অনুসরণ করো না। তোমরা সামান্যই উপদেশ গ্রহণ কর’। [সূরা আল-আ‘রাফ : ৩]

যা যা বর্জন করতে হবেঃ
১।দেরিতে ইফতার করা থেকে বিরত থাকা।
২।মিথ্যা বলা ও অন্যান্য পাপ কাজ করা যাবেনা।
৩।দুনিয়াবী ব্যস্ততায় মগ্ন থাকা যাবে না।
৪।ইফতারে বা অন্য কোন সময় কোন রকম অপচয় করা যাবে না।
৫।বেশি বেশি ঘুমানো যাবে না।
৬।জামাতের সাথে ফরজ সালাত আদায়ে অলসতা দেখানো যাবে না।
৭।অপ্রয়োজনীয় কাজে রাত জাগা যাবে না।
৮।বেদাত কাজ করা যাবে না।
৯।অশ্লীল ছবি নাটক দেখা যাবে না।
১০।কাউকে দেখানোর জন্য ইবাদত করা যাবে না।
১১সেহরি দেরিতে খাওয়া যাবেনা (আজানের পরে পর্যন্ত) সেহেরী না খেয়ে রোজা রাখা।

এম.এইচ বিল্লাল, ইসলামিক লেখক

You may also like

মতামত দিন

ঠিকানা

marbanglasongbad logo

আমার বাংলা সংবাদ মিডিয়া এন্ড কমিউনিকেশন পক্ষে প্রকাশক কর্তৃক প্রকাশিত।

প্রকাশক ও সম্পাদক : হাসান মাহমুদ,
বিভাগীয় প্রধান ( অনলাইন): সাইফ উদ্দিন

জনপ্রিয় সংবাদ

নিউজলেটার

সর্বশেষ সংবাদ সবার আগে পেতে নিউজলেটার সাবস্ক্রাইব করুন।

Are you sure want to unlock this post?
Unlock left : 0
Are you sure want to cancel subscription?
-
00:00
00:00
Update Required Flash plugin
-
00:00
00:00